December 31, 2025, 7:38 pm

দৈনক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এবং ময়মনসিংহে পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস হত্যার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের কনস্যুলার কার্যক্রমেও। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি ও ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ ভিসা সেবা কেন্দ্রের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে আসামের গুয়াহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের ভিসা কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।
দিল্লি ও কলকাতার কূটনৈতিক সূত্রগুলো সোমবার রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ভিসা ও কনস্যুলার সেবাগুলো বন্ধ থাকবে।
শিলিগুড়িতে ভিসা সেন্টার ঘেরাও/
সোমবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের নেতাকর্মীরা জমায়েত হন। পরে তারা মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলাদেশের ভিসা আবেদন সেন্টারের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, দিপু দাস হত্যার বিচার এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
বিক্ষোভকারীরা ভিসা অফিস ঘেরাও করে অবস্থান নিলে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভিসা অফিসে প্রবেশ করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং প্রতিবাদস্বরূপ অফিস বন্ধ রাখার দাবি জানায়।
পতাকা ও কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনা
এর আগে দুপুর ও বিকেলের বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকজন আন্দোলনকারী বাংলাদেশের পতাকা সংবলিত ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলে এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকায় আগুন দেয়। এ সময় শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টার স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার হুমকিও দেওয়া হয়।
কলকাতায় একাধিক দফা বিক্ষোভ/
একই দিন কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের সামনে তিন দফায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফায় ‘নাস্তিক মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এ বিষয়ে উপ-হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, আগেই পুলিশের কাছে নোট ভার্বাল পাঠানো হয়েছিল। ফলে নিরাপত্তা জোরদার ছিল। আন্দোলনকারীরা উপ-হাইকমিশন চত্বরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং পরে তারা প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থান নিয়ে আধাঘণ্টা বিক্ষোভ শেষে স্মারকলিপি দিয়ে চলে যায়।
পরবর্তীতে জাতীয় কংগ্রেসের কর্মীরা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করেন। পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এরপর বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘হিন্দু সনাতনীরা’ নামে একটি সংগঠন বিক্ষোভে অংশ নেয়। পুলিশ বাধা দিলে সেখানে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন হিন্দু সাধুও ছিলেন। এ সময় বেকবাগান মোড়ে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করা হয় এবং ড. ইউনূসের কুশপুত্তলিকায় আগুন দেওয়া হয়।
দিল্লি ও অন্যান্য রাজ্যে প্রতিবাদ/
দিপু দাস হত্যার প্রতিবাদে রোববারও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। একই দাবিতে দিল্লি ও ত্রিপুরাতেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এদিকে, সোমবার দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশন থেকে সব ধরনের কনস্যুলার সেবা ও ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে।